রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৩১ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

স্বাগত হিজরি নববর্ষ

মুহাম্মদ আনোয়ার শাহাদাত হোসেন:
বাংলাদেশের আকাশে আজকের সন্ধ্যায় মহররম মাসের চাঁদ দেখা গেলে কাল থেকে শুরু হবে নতুন হিজরি বর্ষ ১৪৪৫। না হলে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে মহররম মাস। সময়ের পরিক্রমায় আমাদের মধ্যে উপস্থিত হিজরি নববর্ষ-১৪৪৫। হৃদয়ের সব ভালোবাসা আর উষ্ণতা দিয়ে স্বাগত জানাই হিজরি নতুন বছরকে।

নতুন চাঁদ দেখে আমরা হাদিস শরিফের ভাষায় বলি, ‘হে আল্লাহ! তুমি এই চাঁদকে আমাদের ওপর উদিত করো নিরাপত্তা, ইমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে। (হে চাঁদ!) আমার ও তোমার প্রতিপালক আল্লাহ।’ নিজেদের অস্তিত্বের কথা স্মরণ করিয়ে বিশ্ব মুসলিমকে নবচেতনায় উদ্দীপ্ত করতে হিজরি নববর্ষ অতীব গুরুত্বপূর্ণ। মুসলমানদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় সব আচার অনুষ্ঠান ও ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধিবিধান এবং ইবাদত হিজরি তারিখের ওপর নির্ভরশীল।

ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ- রোজা ও হজ পালন করতে হয় হিজরি তারিখ তথা চাঁদের হিসাবের ওপর। তাছাড়া দুই ঈদ, লাইলাতুল কদর ও লাইলাতুল বরাতসহ ইসলামের বিভিন্ন বিধিবিধান হিজরি সনের ওপর নির্ভরশীল।

চাঁদের হিসাবে ইবাদত-বন্দেগির প্রচলন হজরত আদম (আ.)-এর সময় থেকে প্রচলিত ছিল। কিন্তু হিজরি বর্ষ বা সন গণনার প্রবর্তন হয় ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর ফারুক (রা.)-এর খেলাফতের চতুর্থ বছর (৬৩৮ খ্রিস্টাব্দ) থেকে। তখন তিনি অর্ধ পৃথিবীর শাসনকর্তা ছিলেন। রাষ্ট্রীয় কাজে চিঠিপত্র, রাষ্ট্রীয় ফরমান ও বিভিন্ন দলিলাদি আদান-প্রদানে সনের উল্লেখ না থাকায় সমস্যা দেখা দিলে তৎকালীন ইরাক ও কুফার গভর্নর হজরত আবু মুছা আশআরি (রা.) হজরত উমর ফারুক (রা.)-এর খেদমতে বিষয়টি নিবেদন করেন। তিনি হজরত উসমান (রা.) ও হজরত আলি (রা.)-সহ বিশিষ্ট সাহাবিদের নিয়ে পরামর্শ সাপেক্ষে হিজরি সন প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন এবং নবী কারিম (সা.) ও তার প্রিয় সাহাবিদের হিজরতের মাস মহররমকে হিজরি সনের প্রথম মাস নির্ধারণ করে হিজরি সন গণনা শুরু করেন।

মহররম মাস একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ মাস। এই মাসকে ‘শাহরুল্লাহ’ বা আল্লাহর মাস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে যে চারটি বিশেষ মাসের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো- মহররম মাস। -সুরা তওবা : ৩৬

মুসলিম ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ঘটনাবহুল মাস হলো মহররম। অথচ মুসলিম জাতি এই মাসের শিক্ষা থেকে অনেক দূরে। এমনকি হিজরি সনের কথা স্মরণ রাখার প্রয়োজন অনুভব করে না। বিশ্বের অন্যান্য দেশের কথা বাদ দিয়ে যদি বাংলাদেশের কথা বলি, তাহলে দেখা যায় এই বিশেষ দিনটিকে ঘিরে দেশে তেমন কোনো কর্মসূচি থাকে না।

অথচ ভারতীয় উপমহাদেশে ১২০৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে সর্বক্ষেত্রে হিজরি সনের প্রচলন শুরু হয়, যা প্রায় ৫৫০ বছর পর্যন্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত ছিল। পরে ১৭৯০ সাল থেকে এ উপমহাদেশে খ্রিস্টীয় সালের প্রচলন হয়।

বাংলাদেশে প্রচলিত তিনটি সনের মধ্যে হিজরি সন হচ্ছে সর্বপ্রাচীন, অথচ তা পালনে আমাদের কোনো আয়োজন নেই। আমাদের চেতনায় হিজরি সনের গুরুত্বের লেশমাত্র নেই, এটি বড় দুঃখজনক। বাংলা সনকে বাংলাদেশের মুসলমানরা বিজাতীয় সংস্কৃতির রূপে এবং ঢঙে পালন করেন কেননা আমরা অনেকেই জানি না বাংলা সনের ইতিহাস। বাংলা সনের উৎপত্তির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে এটি উৎপত্তিগত দিক থেকে ইসলামের উত্তরাধিকারপ্রাপ্ত। বাদশা আকবরের আমলে মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানী আমির ফতেহুল্লাহ সিরাজি হিজরি সনকে গবেষণা করে বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। সেদিক থেকে বিবেচনা করলেও বাংলা সন উদযাপনে বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণ করার কোনো সুযোগ নেই। অথচ আমরা দ্বীনি ও দেশীয় সংস্কৃতি ভুলে বিজাতীয় সংস্কৃতির উদ্দামতায় গা ভাসিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছি। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

আসুন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হিজরতের প্রেক্ষাপটকে স্মরণার্থে হিজরি নববর্ষ পালন করে আগামী প্রজন্মের কাছে ইসলামের ইতিহাস তথা সংস্কৃতিকে তুলে ধরি। মহান আল্লাহর দ্বীনের প্রচারে প্রিয় নবী (সা.) এবং তার প্রিয় সহচরবৃন্দ কীভাবে মাতৃভূমির মায়া ত্যাগ করে তৎকালীন ইয়াসরিবে (বর্তমান মদিনা) হিজরত করেন তার মহান শিক্ষা ও তাৎপর্য নিহিত রয়েছে এই হিজরি নববর্ষ পালনের মধ্যে। হিজরি সন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় নবী কারিম (সা.)-এর সেই সাহাবি সুহায়ব (রা.)-এর ত্যাগের কথা, যিনি কাফেরদের হাতে বন্দি হয়ে অনেক নির্যাতন সহ্য করার পর নিজের সর্বস্ব কাফেরদের দিয়ে আপন মাতৃভূমির মায়াকে তুচ্ছ করে প্রিয়নবীর নির্দেশকে শিরোধার্য করে মদিনায় হিজরত করেন।

মনে করিয়ে দেয়, হজরত উম্মে সালমা (রা.) ও তার স্বামীর কথা। যার সন্তান কাফিররা ছিনিয়ে নেওয়ার পরও তার স্বামী একা মদিনায় হিজরত করেন। ইসলামের জন্য জাগতিক সব মায়াকে তুচ্ছ করার এক প্রকৃষ্ট ও জ্বলন্ত উদাহরণ এই হিজরি নববর্ষ। তাই সময় এসেছে, সম্মিলিতভাবে হিজরি নববর্ষ পালন করে বিজাতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করা এবং ইসলামি সংস্কৃতির বলয়ে আগামী প্রজন্মকে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। বিদায় হোক পুরাতন বছরের জীর্ণতা, অপূর্ণতা আর অসংগতি। নতুন প্রত্যাশার ভেলায় চড়ে আসুক নতুন বছর, জেগে উঠুক সবাই নতুন উদ্দীপনায়। সত্য আর সুন্দরে ভাস্বর হয়ে উঠুক মানবতার ক্যানভাস। এই প্রত্যাশায় সবার প্রতি হিজরি নববর্ষের অকৃত্রিম শুভেচ্ছা।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION